গরমে শিশুর যত অসুখ

গ্রীষ্মের শুর থেকেই চলছে তাপপ্রবাহ। সূর্যের প্রখরতা যেনো কমছেই না। অতিরিক্ত এই গরমে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে আমাদের পরিবারের ছোট সদস্যরা।

গরমকালে বাচ্চাদের নানান ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। তাই বাবা- মায়েদের দুশ্চিন্তায় বেড়ে যায়।

গরমে বাচ্চাদের যেসব অসুখ হতে পারে আজ সে বিষয় নিয়ে ধারনা দেবার চেষ্টা করেছি ব্লগ টিতে।

👉 ডায়রিয়া : গরমে বাচ্চাদের ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এসময় বাচ্চাদের খাবার হজমে অসুবিধা, বমি হতে পারে। ডায়রিয়া হলে বাচ্চাকে একটু পর পর স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এছাড়া ডাবের পানি, বিশুদ্ধ খাবার পানিও খেতে দিতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

👉 জ্বর : অতিরিক্ত গরমের জন্য শিশুদের জ্বর হতে পারে। তবে জ্বর কোনো অসুখ নয় বরং এটি যেকোনো অসুখের উপসর্গ। ভাইরাস জনিত সংক্রমন, ঠান্ডা ইত্যাদি কারনে জ্বর হতে পারে। যদি জ্বর ১০৩ ডিগ্রি এর বেশি হয় তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় তাই লক্ষ্য রাখতে হবে।

👉 হিটস্ট্রোক : মাত্রারিক্ত গরমে শিশুদেরও হিটস্ট্রোক হতে পারে। শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এসময় শিশুর চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ব্যাথা, দ্রুত শ্বাস নেয়া, জ্ঞান হারানো, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, খিঁচুনি হতে পারে।

👉 সর্দি, কাশি : গরমে অতিরিক্ত ঘামের জন্য শিশুদের ভাইরাসজনিত সর্দি, কাশি হতে পারে। তাই এসময় বেশি বেশি ভিটামিন – সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে এবং অতিরিক্ত যেনো না ঘামে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

👉 নিউমোনিয়া : গ্রীষ্মকালে গরমের কারনে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। এ সময় বাচ্চাদের সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বমি ঘন ঘন হলে তা নিউমোনিয়াতে রূপ নেয়। নিউমোনিয়ার লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

👉 ঘামাচি : গরমে বাচ্চারা অনেক ঘেমে যায়। ফলে এই সময়টি তে ঘামাছি হতে পারে। সাধারনত ঘামাচি দেহের বড় অংশ জুড়ে হয়ে থাকে। আবার কখনো বাচ্চার ঘাড়, গলা, পিঠ, বুকে লাল লাল গোটার মতো ঘামাচি হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ঘামাচি থেকে পুঁজ ও বের হতে পারে। তাই সব সময় সুতির পাতলা কাপড় পরাতে হবে, প্রয়োজনে শরীর স্পঞ্জ করে দিতে হবে, বেবি পাউডার ব্যবহার করতে হবে।

👉 র‌্যাশ : আধুনিক যুগে বাচ্চাদের ডায়াপার পড়ানো হয়ে থাকে। তবে গরমকালে ডায়াপার ব্যবহারের ফলে পরিহিত স্থানে বাচ্চাদের র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। ডায়পার পড়ানোর ফলে পরিহিত স্থানে বাতাস চলাচল করতে পারেনা ফলে ঘামে ভিজে থাকে। দীর্ঘ সময় ভিজা থাকার কারনে ওই স্থানে লাল রংয়ের র‌্যাশ দেখা দেয়, চুলকানি হয় এবং জ্বালাপোড়া করে। তাই গরমে ডায়পার পরালেও লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো একটি ডায়পার দীর্ঘক্ষন না পরিয়ে রাখা হয় এবং পরিহিত স্থান ঘেমে যেনো না থাকে।

👉 জ্ঞান হারানো : তীব্র তাপদাহে বাচ্চার শরীর থেকে ঘামের সাথে পানি ও লবন বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে পানি ও লবনের ঘাটতি দেখা দেয়। এমন অবস্থায় বাচ্চা জ্ঞান হারাতে পারে। তাই বাচ্চাদের বেশি বেশি খাবার পানি, শরবর৷ ডাবের পানি, নানান ধরনের ফলের জুস খাওয়াতে হবে একটু পর পর।

👉 হাম, জলবসন্ত : ১-৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের গরমকালে হাম, জলবসন্ত হতে দেখা যায়। এসময় বাচ্চাকে সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে, বেশি বেশি তরল খাবার খেতে দিতে হবে, যথা সম্ভব ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। আর অবশ্যই সঠিক সময়ে হামের টিকা দিতে হবে বাচ্চাকে।

দিন যত যাচ্ছে গরমের প্রখরতা তত বাড়ছে। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানান রোগের আর্বিভাব। তাই বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে সবাইকে থাকতে হবে সচেতন এবং নিতে হবে বাড়তি যত্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *