চোখ ওঠা/ কনজাংটিভাইটিস এর সতর্কতা

চোখ ওঠা/ কনজাংটিভাইটিস এর সতর্কতা

আমাদের দেহের অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ গুলোর মধ্যে চোখ একটি সংবেদনশীল অঙ্গ। গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে আমাদের দেশে চোখের যে রোগটির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় তা হলো চোখ ওঠা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে কনজাংটিভাইটিস বলে।

শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোনো বয়সের মানুষ কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই খুব দ্রুত একজন থেকে অন্যজন আক্রান্ত হতে পারে।

আমাদের আজকের ব্লগটিতে আমরা কনজাংটিভাইটিস / চোখ ওঠা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা কী :

কনজাংটিভা এক ধরনের পর্দা বা ঝিল্লি। আমাদের চোখের সাদা অংশের নিচে অবস্থিত এই পর্দা যা আবরক হিসেবে কাজ করে থাকে। কোন কারনে সৃষ্ট কনজাংটিভা পর্দার প্রদাহকে কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা বলে।

কখন হয় কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা :

সাধারণত যখন বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে তখন কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে এই রোগ দেখা দেয়।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগের কারন :

চিকিৎসকদের মতে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ই কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগের জন্য দায়ী। আবার অ্যালার্জি জনিত কারনেও এই রোগ হয়ে থাকে। এছাড়া কনট্যাক্ট ল্যান্স, রাসায়নিক পদার্থ, যৌনবাহিত সংক্রমন ইত্যাদি কারণেও কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষন :

# দুই চোখ লাল হয়ে যাওয়া।

# চোখে অস্বস্তিবোধ হওয়া।

# চোখ দিয়ে পানি পড়া।

# চোখ ফুলে যাওয়া।

# চোখ চুলকানো।

# চোখ হালকা জ্বালাপোড়া করা।

# চোখ ব্যাথা করা।

# চোখে কেতুর (পিচুটি) হওয়া।

# সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দুই পাতা লেগে থাকা।

# আলো সহ্য না হওয়া।

# অনেক সময় চোখে ঝাপসা দেখা।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে করণীয়:

# কনজাংটিভাইটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

# কিছুক্ষন পর পর হাত সাবান, হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধোয়া।

# চোখের পানি মোছার জন্য নরম কাপড়, রুমাল, টিস্যু পেপার ব্যবহার করা।

# ব্যবহৃত টিস্যু পেপার ব্যবহারের পর ডাষ্টবিনে ফেলতে হবে।

# আক্রান্ত ব্যক্তিকে চশমা, সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

# কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার কম ব্যবহার করতে হবে।

# ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

যা যা করা যাবেনা :

# কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়, ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার করা যাবেনা।

# বার বার চোখ চুলকানো, ঘষাঘষি করা যাবেনা।

# একটু পর পর চোখে হাত দেয়া যাবেনা।

# চোখের পানি মোছার কাজে ব্যবহৃত একটি টিস্যু পেপার একাধিকবার ব্যবহার করা যাবেনা।

# আক্রান্ত শিশুকে বাহিরে বের করা যাবেনা।

# ধুলোবালি, ময়লা, স্যাতঁস্যাতেঁ জায়গায় যাওয়া যাবেনা।

# শিশুদের চোখে কাজল বা অন্য কিছু দেয়া যাবেনা।

# চোখে বেশি চাপ পড়ে এমন কিছু করা যাবেনা।

# অ্যালার্জি জনিত খাবার যেমন – ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস, কচু, লতি ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা।

কখন যাবো ডাক্তারের কাছে :

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা একটি সাধারন চোখের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীকে ঘরোয়া চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যায়।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ সাধারণত ৬-৭ দিন স্থায়ী হয়ে থাকে। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে সাথে সাথেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবেনা।

যেসব লক্ষন দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে –

# কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা ২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে।

# চোখে অসহনীয় মাত্রায় ব্যাথা হলে।

# চোখে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো দেখলে।

# চোখে ব্যাথার সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হলে।

# নবজাতক শিশুর চোখ লাল হয়ে গেলে।

# একদমই আলোর দিকে তাকাতে না পারলে।

উপরের লক্ষন গুলোর যেকোন একটি দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

শিশুর জন্য বাড়তি সচেতনতা : শিশুরা কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর তাই শিশুদের জন্য বাড়তি সচেতন থাকতে হবে।

শিশুদের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার –

# শিশুদের চোখ নিয়মিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

# বাহিরে গেলে শিশুদের সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

# শিশুদের কাপড়, ব্যবহৃত জিনিস সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

# ময়লা, ধুলোবালি যুক্ত জায়গায় শিশুদের খেলতে দেয়া যাবেনা।

# কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।

# শিশুদের চোখ ভালো রাখে এমন পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগের খাবার :

চোখের নানান রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে চাই পুষ্টিকর খাবার। এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে সুফল পাওয়া যায়।

চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু পুষ্টিকর খাবারের নাম –

# মধু : মধু পুষ্টিগুণে ভরা একটি খাদ্য উপাদান। এতে রয়েছে ৪৫ টি পুষ্টি উপাদান। কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে মধু বেশ উপাদেয়। মধুতে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য পেতে সাহায্য করে থাকে।

# ঘি : ঘি চোখের জন্য বেশ উপকারী। কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে ঘি খেলে দ্রুত ভালো হয়ে যায়। এছাড়া চোখ ভালো রাখতে নিয়মিত ঘি খাওয়া যেতে পারে।

# আমলকি : চোখের জন্য ভিটামিন-সি কতোটা উপকারী সেটা আমরা সবাই জানি।এমনি একটি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল হচ্ছে আমলকি। আমলকি কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে সেই সাথে চোখের অন্যান্য সমস্যা থেকেও চোখকে রক্ষা করে।

# বিট লবন : বিট লবন কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ ভালো করতে সাহায্য করে। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে পরিমান মতো বিট লবন খেতে পারেন।

# কিশমিশ : কিশমিশ আছে এমন সব পুষ্টি উপাদান যা আমাদের চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। কিশমিশে রয়েছে পলিফেনলস যা চোখের বিভিন্ন অসুখ হতে চোখকে রক্ষা করে। তাই কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হলে কিশমিশ খেতে পারেন।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা একটি সাধারন রোগ। একটু সচেতন হলে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সহজেই। তাই কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হলে আতংকিত না হয়ে সচেতন হোন এবং অন্যকেও সতর্ক করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *