Monthly Archives: May 2024

হেলদি বাদাম- খেজুরের মিল্কশেক

হেলদি বাদাম- খেজুরের মিল্কশেক

আমাদের সব মায়েদের একটি কমন অভিযোগ বাচ্চা দুধ খেতে চায়না। কিন্তু বাচ্চাদের মেধা বিকাশের জন্য দুধ অপরিহার্য। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়েরা কতো কিছুই না করে থাকি।

আর তাই মায়েদের জন্য আজ নিয়ে এসেছি দুধের একটি সহজ এবং পুষ্টিতে ভরপুর ঝটপট রেসিপি।

আজ আমরা বানাবো বাদাম-খেজুরের মিল্কশেক। এই মিল্কশেকটি শুধু বাচ্চাদের জন্য নয় বরং পরিবারের সবার জন্য পুষ্টিগুনে ভরা একটি মিল্কশেক।

👉 চলুন বানানো যাক মজাদার হেলদি বাদাম-খেজুরের মিল্কশেক :

যা যা লাগছে :

১.দুধ ২ কাপ

২. খেজুর ৪ টা

৩. মধু পরিমান মতো

৪. কাঠ বাদাম ৬-৭ টা

৫. কাজুবাদাম ৬-৭ টা

৬. পেস্তা বাদাম ৬-৭ টা

প্রস্তুত প্রনালি :

একটি বাটিতে সামান্য পরিমান দুধ নিয়ে তার মধ্যে কাঠ বাদাম, কাজুবাদাম বাদাম, পেস্তা বাদাম ১০ -১৫ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখি। এরপর ২ কাপ দুধ ভালোভাবে ফুটিয়ে গরম করে ঠান্ডা হবার জন্য অপেক্ষা করি।

অতঃপর একটা ব্লেন্ডারে ঠান্ডা হওয়া দুধ, ভিজিয়ে রাখা কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, খেজুর, এবং পরিমান মতো মধু দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করি।

ব্যস রেডি হয়ে গেলো মজাদার হেলদি বাদাম – খেজুরের মিল্কশেক।

মিল্কশেক তো বানানো হলো এবার জেনে নেয়া যাক এর পুষ্টিগুন :

* দুধ এর পুষ্টিগুন : দুধকে আদর্শ খাদ্য বলা হয়। গরুর দুধে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন – এ,ডি,কে, ই রয়েছে।

উপকারিতা :

* দুধ শরীরে শক্তি সরবরাহ করে।

* দুধে থাকা ক্যালসিয়াম হাঁড়কে মজবুত করে।

* শিশুর মেধা বিকাশে সাহায্য করে।

* মানসিক চাপ দূর করে হার্টকে ভালো রাখে।

* এসিডিটির সমস্যা দূর করে।

* ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রন, ডায়াবেটিস এর সমস্যা, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।

বাদাম এর পুষ্টি গুন : বাদামে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন- ই, সি, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ওমেগা -থ্রি।

উপকারিতা :

* বাদাম মেধা বিকাশে সাহায্য করে।

* ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

* হার্টের নানান অসুখ থেকে রক্ষা করে।

* ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।

* ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করতে বাদাম সাহায্য করে থাকে।

* হাঁড় ও পেশিকে মজবুত করে।

খেজুরের পুষ্টিগুন : খেজুরে ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন – এ, বি, কে, আয়রন রয়েছে।

উপকারিতা :

* খেজুর শরীরে শক্তি যোগায়।

* খাওয়ার রুচি বাড়ায়।

* খেজুর রক্তশূন্যতা দূর করে।

* হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।

* চোখ ভালো রাখে।

* যকৃত সুস্থ রাখে।

মধুর পুষ্টিগুন : প্রাকৃতিক ৪৫ টি খাদ্য উপাদান রয়েছে মধুতে।

উপকারিতা :

* মধু হজমে সাহায্য করে।

* অনিদ্রা দূর করে।

* শরীরে তাপ ও শক্তি যোগান দেয়।

* রক্তশূন্যতা দূর করে।

* কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

* ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতা দূর করে।

* হাঁপানি, ফুসফুসের সমস্যা, এলার্জি জনিত ঠান্ডা, কাশি নিরাময় করে।

আজকের বানানো বাদাম- খেজুরের মিল্কশেক এর প্রতিটি উপাদান পুষ্টিগুনে ভরপুর। খুব সহজেই এবং কম সময়ে বানানো যায় এই মিল্কশেক টি।

তাই এক গ্লাস বাদাম- খেজুরের মিল্কশেক হতে পারে বাচ্চা থেকে শুরু করে পরিবারের সবার জন্য এক আর্দশ ড্রিংকস।

তালের শাঁসের স্বাস্থ্য কথন

আমাদের দেশে গ্রীষ্মকাল মানেই নানান ধরনের দেশীয় ফলের সমাহার। গ্রীষ্মকালীন নানান ফলের মধ্যে তালের শাঁস অতি পরিচিত একটি ফল।

তালের শাঁস চেনে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তালের শাঁস শুধু খেতেই মজাদার নয় বরং পুষ্টিগুনে ভরা একটি গ্রীষ্মকালীন ফল।

আজকের ব্লগটিতে আমরা তালের শাঁসের পুষ্টিগুন নিয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি।

পরিচিতি : কচি তালের বীজকে তালের শাঁস/ তালের আঁটি বলা হয়ে থাকে। তালের শাঁসকে ইংরেজিতে Ice apple / Wine palm নামে ডাকা হয়ে থাকে।

তালের শাঁস পাম গোত্রীয় ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম

Borassus flabellifer ( বোরাসুস ফ্লাবেলিয়ার)।

কখন পাওয়া যায় : তালের শাঁস গ্রীষ্মের সময় পাওয়া যায়।

যেখানে পাওয়া যায় : আমাদের দেশের গাজীপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী জেলায় তালের চাষ হয় অনেক। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ ভারতে তালের শাঁস পাওয়া যায়। তবে এই ফলটির আদি নিবাস ছিল সুদূর আফ্রিকা।

পুষ্টি উপাদান : তালের শাঁস শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় বরং পুষ্টি উপাদানে ভরপুর একটি ফল। তালের শাঁসে পানি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম,সেলেনিয়াম, আয়রন, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার, ভিটামিন -সি, ফাইবার রয়েছে।

উপকারিতা : তালের শাঁস গ্রীষ্মে শরীর ঠান্ডা করার পাশাপাশি আপনাকে নানান রোগের হাত থেকে রক্ষাও করবে। তালের শাঁস এর আছে বহুবিধ পুষ্টিগুন।

👉 চলুন জেনে নেয়া যাক তালের শাঁস খাওয়ার উপকারিতা :

# পানিশূন্যতা দূর করে : তালের শাঁসে প্রচুর পরিমানে পানি রয়েছে। ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে ৮৮% পানি রয়েছে। তাই গরমে তালের শাঁস আমাদের শরীরে পানিশূন্যতা দূর করে।

# হজমে সাহায্য করে : গরমে আমাদের অনেকের হজমে সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তালের শাঁস হজমের সমস্যা দূর করে থাকে।

# রক্তশূন্যতা দূর করে : তালের শাঁস এ আছে আয়রন। তাই যারা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য তালের শাঁস খুবই উপাদেয়।

# কোষ্টকাঠিন্য কমায় : যারা কোষ্টকাঠিন্য সমস্যায় ভুগছেন তারা বেছে নিতে পারেন তালের শাঁস। কারন তালের শাঁস কোষ্টকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।

# লিভার সুস্থ রাখে : লিভার সুস্থ রাখতে নিয়মিত তালের শাঁস খান।

# চোখ ভালো রাখে : চোখের নানান সমস্যা যেমন – রাতকানা রোগ, চোখের এলার্জি ইত্যাদি রোগ থেকে চোখকে সুরক্ষা করে তালের শাঁস।

# রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় : তালের শাঁস এ উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে নানান অসুখ হতে শরীরকে রক্ষা করে।

# শরীর ঠান্ডা রাখে : গ্রীষ্মের প্রখর তাপ দাহে তালের শাঁস আপনার শরীরকে রাখবে ঠান্ডা এবং এনে দিবে প্রশান্তি।

# দাঁতের জন্য ভালো : দাঁত ভালো রাখতে দরকার ক্যালসিয়াম। তাই দাঁতের যত্নে তালের শাঁস খান। কেননা তালের শাঁস এ রয়েছে ক্যালসিয়াম যা দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে।

# হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে : তালের শাঁস নিয়মিত খেলে হৃদরোগ থেকে রক্ষা পাবেন।

# গর্ভবতী নারীর জন্য উপকারী : প্রতিটি গর্ভবতী নারীকে পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে হবে। আর গরমে তালের শাঁস গর্ভবতীর জন্য একটি পুষ্টি গুনে ভরপুর একটি ফল। তালের শাঁস গর্ভবতীদের বমি ভাব দূর করে, অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়। এছাড়া ক্লান্তি দূর করে, রক্তশূন্যতা রোধ করে, বুকের দুধ উৎপাদন বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। তাই তালের শাঁস গর্ভবতী নারীর জন্য একটি আদর্শ খাবার।

# ত্বক ভালো রাখে : গরমকালে অতিরিক্ত ঘামের সাথে আমাদের শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। ফলে ত্বক এবং চুলে নানান সমস্যা দেখা দেয়। তালের শাঁস এ বিদ্যমান নানান পুষ্টি উপাদান ত্বক এবং চুলকে ভালো রাখে।

# রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করে : শরীরে নাইট্রেটের পরিমাণ বাড়লে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে। তালের শাঁস খেলে প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরে নাইট্রেটের পরিমান বেড়ে যায় ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে।

# ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় : তালের শাঁস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

# স্মৃতিশক্তি বাড়ায় : প্রাকৃতিকভাবে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে তালের শাঁস এর জুড়ি নেই।

গ্রীষ্মের তাপদাহে নিজেদের এবং পরিবারের সবাইকে সুস্থ রাখতে দরকার পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা। পুষ্টিগুনে ভরা তালের শাঁস হতে পারে এই গরমের একটি আদর্শ খাবার। কারন তালের শাঁস খেলে শুধু শরীর ঠান্ডা হবে তা নয় বরং নানান অসুখ থেকেও মিলবে মুক্তি।

গরমে শিশুর যত অসুখ

গ্রীষ্মের শুর থেকেই চলছে তাপপ্রবাহ। সূর্যের প্রখরতা যেনো কমছেই না। অতিরিক্ত এই গরমে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে আমাদের পরিবারের ছোট সদস্যরা।

গরমকালে বাচ্চাদের নানান ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। তাই বাবা- মায়েদের দুশ্চিন্তায় বেড়ে যায়।

গরমে বাচ্চাদের যেসব অসুখ হতে পারে আজ সে বিষয় নিয়ে ধারনা দেবার চেষ্টা করেছি ব্লগ টিতে।

👉 ডায়রিয়া : গরমে বাচ্চাদের ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এসময় বাচ্চাদের খাবার হজমে অসুবিধা, বমি হতে পারে। ডায়রিয়া হলে বাচ্চাকে একটু পর পর স্যালাইন খাওয়াতে হবে। এছাড়া ডাবের পানি, বিশুদ্ধ খাবার পানিও খেতে দিতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

👉 জ্বর : অতিরিক্ত গরমের জন্য শিশুদের জ্বর হতে পারে। তবে জ্বর কোনো অসুখ নয় বরং এটি যেকোনো অসুখের উপসর্গ। ভাইরাস জনিত সংক্রমন, ঠান্ডা ইত্যাদি কারনে জ্বর হতে পারে। যদি জ্বর ১০৩ ডিগ্রি এর বেশি হয় তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় তাই লক্ষ্য রাখতে হবে।

👉 হিটস্ট্রোক : মাত্রারিক্ত গরমে শিশুদেরও হিটস্ট্রোক হতে পারে। শিশুর শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এসময় শিশুর চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ব্যাথা, দ্রুত শ্বাস নেয়া, জ্ঞান হারানো, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, খিঁচুনি হতে পারে।

👉 সর্দি, কাশি : গরমে অতিরিক্ত ঘামের জন্য শিশুদের ভাইরাসজনিত সর্দি, কাশি হতে পারে। তাই এসময় বেশি বেশি ভিটামিন – সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে এবং অতিরিক্ত যেনো না ঘামে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

👉 নিউমোনিয়া : গ্রীষ্মকালে গরমের কারনে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়। এ সময় বাচ্চাদের সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বমি ঘন ঘন হলে তা নিউমোনিয়াতে রূপ নেয়। নিউমোনিয়ার লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

👉 ঘামাচি : গরমে বাচ্চারা অনেক ঘেমে যায়। ফলে এই সময়টি তে ঘামাছি হতে পারে। সাধারনত ঘামাচি দেহের বড় অংশ জুড়ে হয়ে থাকে। আবার কখনো বাচ্চার ঘাড়, গলা, পিঠ, বুকে লাল লাল গোটার মতো ঘামাচি হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ঘামাচি থেকে পুঁজ ও বের হতে পারে। তাই সব সময় সুতির পাতলা কাপড় পরাতে হবে, প্রয়োজনে শরীর স্পঞ্জ করে দিতে হবে, বেবি পাউডার ব্যবহার করতে হবে।

👉 র‌্যাশ : আধুনিক যুগে বাচ্চাদের ডায়াপার পড়ানো হয়ে থাকে। তবে গরমকালে ডায়াপার ব্যবহারের ফলে পরিহিত স্থানে বাচ্চাদের র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। ডায়পার পড়ানোর ফলে পরিহিত স্থানে বাতাস চলাচল করতে পারেনা ফলে ঘামে ভিজে থাকে। দীর্ঘ সময় ভিজা থাকার কারনে ওই স্থানে লাল রংয়ের র‌্যাশ দেখা দেয়, চুলকানি হয় এবং জ্বালাপোড়া করে। তাই গরমে ডায়পার পরালেও লক্ষ্য রাখতে হবে যেনো একটি ডায়পার দীর্ঘক্ষন না পরিয়ে রাখা হয় এবং পরিহিত স্থান ঘেমে যেনো না থাকে।

👉 জ্ঞান হারানো : তীব্র তাপদাহে বাচ্চার শরীর থেকে ঘামের সাথে পানি ও লবন বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে পানি ও লবনের ঘাটতি দেখা দেয়। এমন অবস্থায় বাচ্চা জ্ঞান হারাতে পারে। তাই বাচ্চাদের বেশি বেশি খাবার পানি, শরবর৷ ডাবের পানি, নানান ধরনের ফলের জুস খাওয়াতে হবে একটু পর পর।

👉 হাম, জলবসন্ত : ১-৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের গরমকালে হাম, জলবসন্ত হতে দেখা যায়। এসময় বাচ্চাকে সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরাতে হবে, বেশি বেশি তরল খাবার খেতে দিতে হবে, যথা সম্ভব ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। আর অবশ্যই সঠিক সময়ে হামের টিকা দিতে হবে বাচ্চাকে।

দিন যত যাচ্ছে গরমের প্রখরতা তত বাড়ছে। আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নানান রোগের আর্বিভাব। তাই বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে সবাইকে থাকতে হবে সচেতন এবং নিতে হবে বাড়তি যত্ন।

সচেতনতায় কমবে ডেঙ্গু

বর্তমান সময়ের আতংকের অপর নাম ডেঙ্গু। প্রতি বছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা তত বাড়ছে।

ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা নিয়ে সবার মনে আতংক বিরাজ করছে। কিন্তু আতংকিত না হয়ে একটু সচেতন হলেই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আজ আমরা ডেঙ্গু নিয়ে সকল জানা-অজানা তথ্য আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি।

ডেঙ্গু জ্বর কী : ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। এডিস এজিপ্টি নামক স্ত্রী মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে মানুষ আক্রান্ত হয়।

প্রাদুর্ভাব : ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলের গ্রীষ্ম প্রধান দেশগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকা মহাদেশেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গু দেখা দিচ্ছে।

ইতিহাস : প্রাচীনকালে চীনের জিন রাজবংশে প্রথম ডেঙ্গুর মতো রোগের বর্ণনা পাওয়া যায়। ১৮ শতকের শেষে তিনটি মহামারী আকারে ডেঙ্গুর আগমন ঘটে। এই তিনটি মহামারী কায়রো, ইন্দোনেশিয়া এবং পেনসিলভানিয়ায় ঘটেছিল।

১৭৮৯ সালে ডেঙ্গু রোগের প্রথম ক্লিনিক্যাল বর্ণনা দিয়েছিলেন আমেরিকার চিকিৎসক বেঞ্জামিন রাশ।

এডিস ইজিপ্টিকে ডেঙ্গু রোগের বাহক হিসেবে শনাক্ত করেন অস্ট্রেলিয়ান প্রকৃতিবিদ টমাস লেন ব্যানক্রফট ১৯০০ সালে।

দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায় ডেঙ্গুর আর্বিভাব ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে এবং পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

সংক্রমনের সময় : বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। জুলাই – অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। তবে বর্তমানে মার্চ মাস থেকেই ডেঙ্গুতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং তা সারা বছর জুড়ে স্থায়ী হচ্ছে।

কখন কামড় দেয় এডিস মশা : আমরা ভাবি মশা হয়তো রাতে কামড় দিয়ে থাকে। কিন্তু এডিস মশা রাতে কামড়ায় না বরং ভোরে এবং বিকেলে এডিস মশা কামড় দেয়।

যেভাবে বুঝবো ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি : এডিস মশা কামড় দেবার সাথে সাথে ডেঙ্গু জ্বর হয় না। বরং কামড়ের ৩-১৫ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন গুলো দেখা দেয়।

জেনে নেয়া যাক ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন :

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষন গুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।

যথা : ১. সাধারন লক্ষন, ২. গুরুতর লক্ষন।

সাধারন লক্ষন :

# অত্যাধিক জ্বর। এক্ষেত্রে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে।

# মাংসপেশিতে ব্যাথা অনুভূত হওয়া।

# তীব্র মাথা ব্যাথা এবং মাথা ঘোরানো।

# বমি ভাব।

# চোখের পিছনে ব্যাথা করা।

# ত্বকের বিভিন্ন স্থানে লাল রংয়ের ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

# গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে।

এই লক্ষন গুলো সংক্রমনের ৪-১০ দিনের মধ্যে দেখা দেয় এবং ২-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

গুরুতর লক্ষন :

# বার বার বমি হওয়া।

# পেট ব্যাথা করা।

# প্রসাব – পায়খানার সাথে রক্তপাত।

# নাক থেকে রক্ত পড়া।

# দ্রুত গতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া।

# ক্লান্তি ভাব।

প্ল্যাটলেটের সংখ্যা হ্রাস : ডেঙ্গুর সবচেয়ে ভয়াবহ রুপ হচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে প্ল্যাটলেটের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া। একজন সুস্থ প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির প্ল্যাটলেটের সংখ্যা ১,৫০,০০০-৪,৫০,০০০।

যখন এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষের শরীরে ডুকে তখন রক্তনালীতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে প্ল্যাটলেটের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর প্ল্যাটলেটের সংখ্যা ২০,০০০ এর নিচে নেমে যেতে পারে এবং মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

ডেঙ্গু রোগীর যত্ন :

# বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে।

# ডাবের পানি, বিভিন্ন ফলের জুস রোগীকে একটু পর পর খাওয়াতে হবে।

# যেসব ফল ও শাক সবজি তে ভিটামিন-সি আছে সেসব ফল এবং শাক সবজি খাওয়াতে হবে।

# আয়রন রক্তেের প্ল্যাটলেট বৃদ্ধি করে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে।

# জিংক সমৃদ্ধ খাবায় খাওয়াতে হবে।

# ডেঙ্গু জ্বরের একটা উপাদেয় ফল হচ্ছে পেঁপে।

# দিনে এবং রাতে মশারী টানিয়ে ঘুমাতে হবে।

কখন হাসপাতালে নিতে হবে : ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত সব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে তা কিন্তু নয়। বরং ডেঙ্গু জ্বরের ধরন বুঝে চিকিৎসা নিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের ৩টি ধরন রয়েছে। যথা :

# ধরন “এ” : এ ধরনের রোগীদের সাধারণ জ্বর থাকে। এদের হাসপাতালে ভর্তি হবার দরকার নাই।

# ধরন “বি” : এক্ষেত্রে রোগীর জ্বরের সাথে সাথে বমি, প্রচুর পেট ব্যাথা, খাওয়ার অরুচি হতে পারে। এদেরও হাসপাতালে ভর্তি হবার প্রয়োজন নাই।

# ধরন “সি” : যেসব রোগীদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের গুরুতর লক্ষন গুলো দেখা দেয় তারা ধরন “সি” এর অন্তর্ভূক্ত। এদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা :

# প্রত্যেকের বাসা এবং তার আশেপাশের সকল জায়গা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

# খাল,বিল,ডোবা, নর্দমা, নালার ময়লা পানি পরিষ্কার করতে হবে নিয়মিত।

# খোলা পাত্র, নারিকেল খোল, ডাবের খোল, গাছের টব, এসির পিছন অংশ কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবেনা।

# এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। তাই কেনভাবেই কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবেনা।

# কোনো জায়গায় মশার লার্ভা দেখলে সাথে সাথে ধংস করতে হবে।

# নিয়মিত মশা মারার স্প্রে ছিটাতে হবে।

# এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র গুলোকে নষ্ট করতে হবে।

# বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।

আতংকিত না হয়ে একটু সচেতন হলেই আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারবো। আসুন নিজে সচেতন হই এবং অন্যকেও সতর্ক করি ; মিলেমিশে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করি।

ভিটামিন-ডি এর আদ্যোপান্ত

ভিটামিন-ডি এর আদ্যোপান্ত

আজকাল আমাদের অনেককেই বলতে শুনা যায় সারা শরীরে গাঁটে গাঁটে ব্যাথা করে। আবার অনেকেরই অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়ে যাচ্ছে অথবা কারো কারো ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে।

কেউ কেউ হঠাৎ করেই মুটিয়ে যাচ্ছে আবার কারো কারো সারাদিনই কোনো কারন ছাড়াই ক্লান্ত লাগছে।

শরীরে এমন নানান সমস্যা নিয়ে আমরা সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। ভেবে বসি না জানি কোন দুরারোগ্য অসুখ হয়েছে!

আমাদের শরীরের অতিপ্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর মধ্যে যেকোন একটি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে নানান সমস্যা দেখা দেয়।

ভিটামিন-ডি শরীরের এমন একটি অত্যাবশকীয় উপাদান যার ঘাটতি হলে শরীর নানান অসুখে আক্রান্ত হয়।

আমাদের আজকের ব্লগটিতে ভিটামিন-ডি নিয়ে নানান সব তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

প্রথমেই জেনে নেয়া যাক ভিটামিন-ডি এর অভাব কেন হয় :

বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদনের জন্য আমাদের প্রতিদিন ১০০০-১২০০ ইউনিট ভিটামিন-ডি প্রয়োজন হয়ে থাকে। সূর্য ভিটামিন-ডি এর প্রধান উৎস।

সূর্যালোকের উপস্থিতিতে প্রাকৃতিকভাবে আমাদের শরীরে ভিটামিন-ডি তৈরী হয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন শরীর যখন সূর্যের আলো পায় না তখনই ভিটামিন-ডি এর অভাব দেখা দেয়।

এছাড়া প্রোটিন জাতীয় খাবারের অভাবে এবং কারো কারো ক্ষেত্রে জিনগত কারনেও ভিটামিন-ডি এর অভাব দেখা দিয়ে থাকে।

যেভাবে বুঝবো শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব:

# সারা শরীরে সারাক্ষণ ব্যাথা অনুভব হওয়া।

# অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়ে যাওয়া।

# পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নেবার পরও শরীরে ক্লান্তিবোধ অনুভব করা।

# কোনো কারন ছাড়াই হঠাৎ করে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া অথবা ওজন হ্রাস পাওয়া।

# রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।

# মানসিক বিষন্নতা এবং দ্রুত মেজাজের পরিবর্তন হওয়া।

# দাঁত ভেঙে যাওয়া।

# শরীরের কোনো ক্ষত শুকাতে দেরী হওয়া।

# দীর্ঘ সময় কোমর, পিঠ, মেরুদণ্ডে ব্যাথা করা।

# থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দেয়।

# ত্বকের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া।

অভাবজনিত রোগ : ভিটামিন-ডি এর অভাবে যেসব রোগ হয়ে থাকে –

# খাওয়ায় অরুচি : অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চারা কোনো কারন ছাড়াই খাবার খেতে চায় না। বাচ্চাদের খাওয়ার প্রতি অরুচির জন্য ভিটামিন-ডি দায়ী।

# শিশুদের রিকেট রোগ : ভিটামিন-ডি এর অভাবে শিশুদের রিকেট রোগ হয়।

# দাঁত ক্ষয় : ভিটামিন-ডি এর ঘাটতিতে বয়স্ক ও শিশুদের দাঁতের ক্ষয় রোগ হয়ে থাকে এমনকি দাঁত ভেঙে যায়।

# অনিদ্রা : শিশুদের অনিদ্রার জন্য ভিটামিন-ডি দায়ী।

# অস্টিওপরোসিস : ভিটামিন-ডি এর অভাবে অস্টিওপরোসিস রোগ হয়ে থাকে। হাঁড়ের শক্তি হ্রাস পেয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং এক সময় হাঁড়ে ফাটল ও দেখা দিয়ে থাকে। একে অস্টিওপরোসিস বলা হয়।

# জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার : মহিলাদের জরায়ু ও স্তন ক্যান্সার ভিটামিন-ডি এর অভাবে হয়ে থাকে।

# লিভারের নানান অসুখ : শরীরে ভিটামিন-ডি এর অভাব হলে লিভারের নানান অসুখ দেখা দিয়ে থাকে।

# চুল এবং ত্বকের রং পরিবর্তন : ভিটামিন-ডি এর অভাবে ত্বকের রং পরিবর্তন হয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়ে যায়।

ভিটামিন-ডি এর উৎস সমূহ :

# সূর্য : সূর্য ভিটামিন-ডি এর প্রধান উৎস। প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকলে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি দূর হয়। সকাল ১০টা – দুপুর ৩টা পর্যন্ত সূর্যের আলোতে ভালো পরিমানে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়।

# দুধ : ভিটামিন-ডি এর অন্যতম প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে গরুর দুধ। গরুর দুধে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-ডি রয়েছে। ১ কাপ গরুর দুধে ১২৫ IU ভিটামিন-ডি রয়েছে।

# ডিমের কুসুম : একটি ডিমের কুসুমে প্রায় ৪০ IU ভিটামিন-ডি রয়েছে। তাই ডিমের কুসুম ভিটামিন-ডি এর একটি ভালো উৎস।

# কমলা : কমলা শুধু যে ভিটামিন-সি এর চাহিদা পূরণ করে তা নয় বরং ভিটামিন-ডি এর চাহিদাও পূরণ করে থাকে।

# মাশরুম : মাশরুমে ভিটামিন-ডি২ রয়েছে যা রক্তে ভিটামিন-ডি উৎপাদন বৃদ্ধি করে।

# সামুদ্রিক মাছ : সামুদ্রিক মাছ ভিটামিন-ডি এর অন্যতম প্রধান উৎস। স্যালমন, কোরাল, টুনা, ইলিশ, চিংড়ি, সার্ডিন ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-ডি রয়েছে। স্যালমন মাছে ৩৭০ IU ভিটামিন-ডি রয়েছে যা ৮৪% চাহিদা পূরণ করে থাকে।

# মাছের তেল : সামুদ্রিক কড মাছের তেলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন-ডি রয়েছে। ১ চামচ কড মাছের তেলে ৩৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-ডি রয়েছে।

# টকদই : টকদই ভিটামিন-ডি এর ভালো উৎস।

# গরুর কলিজা : রান্না করা গরুর কলিজায় ৩৬ IU ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়।

# কাঠবাদাম : কাঠবাদাম ভিটামিন-ডি এর অন্যতম উৎস। এতে প্রতিদিনের চাহিদার ৯% ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়।

# কিশমিশ : কিশমিশে ৮২ IU ভিটামিন-ডি রয়েছে।

# খেজুর : খেজুর ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি পূরনে সাহায্য করে।

# পালংশাক : পালংশাকও ভিটামিন-ডি এর একটি ভালো উৎস।

# ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্টারি : বাজারে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন-ডি এর সাপ্লিমেন্টারি পাওয়া যায়। তবে যেকোন সাপ্লিমেন্টারি গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রতিদিন কতোটুকু ভিটামিন-ডি প্রয়োজন :

বয়সভেদে শরীরে ভিটামিন-ডি এর চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে বয়স অনুপাতে এর পরিমান ২৫-১০০ মিলিগ্রাম হয়ে থাকে।

০-১২ মাস বয়সী শিশুদের জন্য প্রতিদিন ৪০০ ইউনিট ভিটামিন-ডি দরকার।

১-৭০ বছর বয়সী মানুষদের জন্য ৬০০ ইউনিট ভিটামিন-ডি দরকার।

৭০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ৮০০ ইউনিট ভিটামিন-ডি দরকার।

আমাদের শরীর সুস্থ রাখতে হলে শরীরের জন্য অত্যাবশকীয় উপাদানগুলো সঠিক পরিমানে শরীরে থাকতে হবে। ভিটামিন-ডি এমনি একটি অত্যাবশকীয় উপাদান। এর অভাবে আমাদের শরীরে নানান অসুখ হতে পারে। তাই প্রতিদিন আমাদের কিছু সময় সূর্যের আলোতে থাকতে হবে এবং ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে বেশি বেশি।

চোখ ওঠা/ কনজাংটিভাইটিস এর সতর্কতা

চোখ ওঠা/ কনজাংটিভাইটিস এর সতর্কতা

আমাদের দেহের অঙ্গ -প্রত্যঙ্গ গুলোর মধ্যে চোখ একটি সংবেদনশীল অঙ্গ। গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে আমাদের দেশে চোখের যে রোগটির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় তা হলো চোখ ওঠা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে কনজাংটিভাইটিস বলে।

শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোনো বয়সের মানুষ কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ তাই খুব দ্রুত একজন থেকে অন্যজন আক্রান্ত হতে পারে।

আমাদের আজকের ব্লগটিতে আমরা কনজাংটিভাইটিস / চোখ ওঠা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা কী :

কনজাংটিভা এক ধরনের পর্দা বা ঝিল্লি। আমাদের চোখের সাদা অংশের নিচে অবস্থিত এই পর্দা যা আবরক হিসেবে কাজ করে থাকে। কোন কারনে সৃষ্ট কনজাংটিভা পর্দার প্রদাহকে কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা বলে।

কখন হয় কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা :

সাধারণত যখন বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে তখন কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকে। আমাদের দেশে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে এই রোগ দেখা দেয়।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগের কারন :

চিকিৎসকদের মতে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ই কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগের জন্য দায়ী। আবার অ্যালার্জি জনিত কারনেও এই রোগ হয়ে থাকে। এছাড়া কনট্যাক্ট ল্যান্স, রাসায়নিক পদার্থ, যৌনবাহিত সংক্রমন ইত্যাদি কারণেও কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষন :

# দুই চোখ লাল হয়ে যাওয়া।

# চোখে অস্বস্তিবোধ হওয়া।

# চোখ দিয়ে পানি পড়া।

# চোখ ফুলে যাওয়া।

# চোখ চুলকানো।

# চোখ হালকা জ্বালাপোড়া করা।

# চোখ ব্যাথা করা।

# চোখে কেতুর (পিচুটি) হওয়া।

# সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দুই পাতা লেগে থাকা।

# আলো সহ্য না হওয়া।

# অনেক সময় চোখে ঝাপসা দেখা।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে করণীয়:

# কনজাংটিভাইটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তির চোখ নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

# কিছুক্ষন পর পর হাত সাবান, হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধোয়া।

# চোখের পানি মোছার জন্য নরম কাপড়, রুমাল, টিস্যু পেপার ব্যবহার করা।

# ব্যবহৃত টিস্যু পেপার ব্যবহারের পর ডাষ্টবিনে ফেলতে হবে।

# আক্রান্ত ব্যক্তিকে চশমা, সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

# কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি টিভি, মোবাইল, কম্পিউটার কম ব্যবহার করতে হবে।

# ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।

যা যা করা যাবেনা :

# কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কাপড়, ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার করা যাবেনা।

# বার বার চোখ চুলকানো, ঘষাঘষি করা যাবেনা।

# একটু পর পর চোখে হাত দেয়া যাবেনা।

# চোখের পানি মোছার কাজে ব্যবহৃত একটি টিস্যু পেপার একাধিকবার ব্যবহার করা যাবেনা।

# আক্রান্ত শিশুকে বাহিরে বের করা যাবেনা।

# ধুলোবালি, ময়লা, স্যাতঁস্যাতেঁ জায়গায় যাওয়া যাবেনা।

# শিশুদের চোখে কাজল বা অন্য কিছু দেয়া যাবেনা।

# চোখে বেশি চাপ পড়ে এমন কিছু করা যাবেনা।

# অ্যালার্জি জনিত খাবার যেমন – ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ, গরুর মাংস, কচু, লতি ইত্যাদি খাওয়া যাবেনা।

কখন যাবো ডাক্তারের কাছে :

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা একটি সাধারন চোখের রোগ। এই রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীকে ঘরোয়া চিকিৎসা দিলে সুস্থ হয়ে যায়।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ সাধারণত ৬-৭ দিন স্থায়ী হয়ে থাকে। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে সাথে সাথেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবেনা।

যেসব লক্ষন দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে –

# কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা ২ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে।

# চোখে অসহনীয় মাত্রায় ব্যাথা হলে।

# চোখে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো দেখলে।

# চোখে ব্যাথার সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা হলে।

# নবজাতক শিশুর চোখ লাল হয়ে গেলে।

# একদমই আলোর দিকে তাকাতে না পারলে।

উপরের লক্ষন গুলোর যেকোন একটি দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

শিশুর জন্য বাড়তি সচেতনতা : শিশুরা কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আর তাই শিশুদের জন্য বাড়তি সচেতন থাকতে হবে।

শিশুদের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার –

# শিশুদের চোখ নিয়মিত পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

# বাহিরে গেলে শিশুদের সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

# শিশুদের কাপড়, ব্যবহৃত জিনিস সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

# ময়লা, ধুলোবালি যুক্ত জায়গায় শিশুদের খেলতে দেয়া যাবেনা।

# কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে।

# শিশুদের চোখ ভালো রাখে এমন পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগের খাবার :

চোখের নানান রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে চাই পুষ্টিকর খাবার। এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে সুফল পাওয়া যায়।

চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু পুষ্টিকর খাবারের নাম –

# মধু : মধু পুষ্টিগুণে ভরা একটি খাদ্য উপাদান। এতে রয়েছে ৪৫ টি পুষ্টি উপাদান। কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে মধু বেশ উপাদেয়। মধুতে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য পেতে সাহায্য করে থাকে।

# ঘি : ঘি চোখের জন্য বেশ উপকারী। কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে ঘি খেলে দ্রুত ভালো হয়ে যায়। এছাড়া চোখ ভালো রাখতে নিয়মিত ঘি খাওয়া যেতে পারে।

# আমলকি : চোখের জন্য ভিটামিন-সি কতোটা উপকারী সেটা আমরা সবাই জানি।এমনি একটি ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল হচ্ছে আমলকি। আমলকি কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে সেই সাথে চোখের অন্যান্য সমস্যা থেকেও চোখকে রক্ষা করে।

# বিট লবন : বিট লবন কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগ ভালো করতে সাহায্য করে। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে পরিমান মতো বিট লবন খেতে পারেন।

# কিশমিশ : কিশমিশ আছে এমন সব পুষ্টি উপাদান যা আমাদের চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে। কিশমিশে রয়েছে পলিফেনলস যা চোখের বিভিন্ন অসুখ হতে চোখকে রক্ষা করে। তাই কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হলে কিশমিশ খেতে পারেন।

কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা একটি সাধারন রোগ। একটু সচেতন হলে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সহজেই। তাই কনজাংটিভাইটিস /চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হলে আতংকিত না হয়ে সচেতন হোন এবং অন্যকেও সতর্ক করুন।